ঝিনাইদহে গড়াই নদীর পানি কম থাকায় দিনের পর দিন নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি, বসত ঘর, মসজিদ, রাস্তাঘাট সহ নানা স্থাপনা। শুকনো মৌসুমেও ঝিনাইদহের শৈলকুপা গড়াই নদীর ভাঙ্গনে হুমকির মুখে বেশ কয়েকটি গ্রাম। ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে বাড়ি-ঘর, মসজিদ, রাস্তাঘাট ও কয়েক’শ একর ফসলি জমি। নদী পাড়ের মানুষদের আশঙ্কা, ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বিলীন হয়ে যাবে বাকি জমি ও জিকে সেচ প্রকল্পের একমাত্র খালটিও। বেশ ক্ষতি গ্রস্থ হবে নদী পাড়ের মানুষেরা।
এলাকা ঘুরে দেখা যায় শৈলকুপা উপজেলার বড়–রিয়া, কৃষ্ণনগর, মাঝদিয়া, মাদলা, উলুবাড়িয়া ও নলখোলাসহ নদী তীরের কয়েকটি গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর পানি কম থাকায় দিনের পর দিন নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলী জমি, বসত ঘর, মসজিদ, রাস্তাঘাট সহ নানা স্থাপনা।
উপজেলার বড়–রিয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, গড়াই নদীতে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে আমার ফসলী জমি সব চলে গেছে। বাড়ি-ঘর সবই নদীতে ভেঙে গেছে। এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। গড়াই নদীর কয়েক বছরের ভাঙ্গনে সহায় সম্পত্তি হারিয়ে এখন আমি নিঃস্ব। এখন অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাতে হয় আমার। এ বছর শুকনো মৌসুমে শেষ সম্বল বসত বাড়ির অর্ধেক চলে গেছে নদী গর্ভে। বাকি অংশটুকুও হুমকির মুখে। এটুকু ভেঙে গেলে আমার আর কিছুই থাকবে না।
কৃষ্ণনগর গ্রামের হরেন্দ্রনাথ বলেন, শুধু আমাদের গ্রাম না। আশপাশের প্রতিটি গ্রামে এমন ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিবার পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙে। তবে এবার পানি কমার সাথে সাথে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আর নদীর পানি কমে গেলে ভাঙে এটা আমার জানা ছিলোনা। এবছর ভাঙনের পরিমাণ বেশি।
উলুবাড়িয়া গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে গ্রামের অর্ধেকই শেষ হয়ে গেছে। প্রতিবছর ভাঙছে। কিন্তু ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ব্যবস্থা নেয় না। আমাদের সহায় সম্বল সব হারিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয় না। নদী পাড়ের অনেক বাসিন্দা এখন অন্যত্র বসবাস করছে। আমাদেরও এখন সেই অবস্থা হচ্ছে। যেটুকু বাকি আছে সেটুকু ভেঙে গেলে আমাদেরও ভুমিহীন হয়ে থাকতে হবে। তাই দ্রুত স্থায়ী বাধ নির্মানের দাবী জানাচ্ছি।
মাঝদিয়া গ্রামের দিনমজুর রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর জিও ব্যাগ দিয়ে এলাকায় হালকা কাজ করে। কিন্তু তাতে কোন কাজে আসে না। তাই আমাদের দাবী এই ভাঙন রোধ করতে হলে স্থায়ী বাধ নির্মান করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু বসতবাড়ি আর আবাদি জমিই নয়। আমরা তো সব হারিয়েছি। এখন বাকি অংশ ভেঙে গেলে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের প্রধান খালটিও নদীতে চলে যাবে। তখন এই এলাকার সেচ প্রকল্প বাঁধা গ্রস্থ হবে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, প্রতিবছর আমরা জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করি। কিন্ত ওই স্থানে স্থায়ী বাঁধ দেওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়ে আমরা ডিপিপির প্রস্তাব দিয়েছি। ডিপিপি পাস হলেই এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।
Leave a Reply