বাগানগুলোতে লিচু পরিপক্ব হওয়ার অবস্থায় চলে এসেছে। গেল কয়েক বছরের চেয়ে এবার লিচুর ফলন বেশি। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে নতুন এক রোগ। পরিপক্ব হওয়ার আগেই তীব্র দাবদাহে গাছেই ফেটে যাচ্ছে লিচু। নষ্ট হচ্ছে সুমিষ্ট এ ফলের প্রাকৃতিক স্বাদ। দাবদাহ থেকে লিচু রক্ষায় নির্ধারিত সময়ের আগেই গাছ থেকে পেড়ে বাজারে নিচ্ছেন চাষিরা। এতেই দুশ্চিন্তার শেষ নেই চাষিদের। ফলে একদিকে বাজারে যেমন আসছে না ভালো মানের লিচু, অন্যদিকে উপযুক্ত বাজার দরও পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা লিচু ফলনের জন্য সবচেয়ে ভালো। আবহাওয়া কর্মকর্তাদের মতে, গত কয়েকদিন ধরে দিনাজপুর, রংপুর ও রাজশাহীসহ বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
গত চার দিন ধরে দিনাজপুরে দৈনিক তাপমাত্রা ৩৬-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করেছিল।
সরজমিনে উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র রোদ ও গরমের কারণে লিচুর খোসা পুড়ে যেতে শুরু করেছে। অপরিপক্ব লিচু গরমের কারণে ফেটে যাচ্ছে। এতে বাজারে আসার মাত্র ১০-১৫ দিন আগে লিচুতে বিপর্যয় ও লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
খামারপাড়া ইউনিয়নের আলহাজ্ব ইসমাইল হোসেন নামে এক বাগান মালিক বলেন, বাগানে লিচু পরিপক্ব হওয়ায় আগেই লাল হয়ে ফেটে যাচ্ছে। এতে খুব লোকসানে পড়েছি। যা খরচ করেছি তা উঠানোই মুশকিল।
পাকেরহাটের লিচু ব্যবসায়ী মো.সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রতি বছরের মতোই এ বছর উপজেলায় বেশ কয়েকটি বাগান কিনেছি। বাগানে বোম্বাই ও মাদ্রাজি লিচু রয়েছে। কয়েকদিনের প্রচণ্ড রোদে লিচু বাগানের বেশিরভাগ লিচু রোদে পুড়ে গেছে। এখন ফেটে গিয়ে ঝড়ে পড়ছে। কোনো পাইকার লিচু কিনতে চাচ্ছেন না। লিচু নিয়ে বিপাকে আছি।
রাজধানী থেকে আসা লিচু ব্যাপারী আকিবুল ইসলাম বলেন, লিচু কিনতে এ উপজেলায় এসেছি। তাপমাত্রার কারণে লিচু তেমন ভালো পাচ্ছি না। তারপরও কেনার চিন্তা ভাবনা করছি।ব্যবসা কেমন হবে তাও বলতে পারতেছি না। এবারের তাপমাত্রার কারণে লিচু পুড়ে ও ফেটে যাচ্ছে। সেই কারণে অনেকেই লোকসানের মুখ দেখবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় লিচুর চাষ হওয়া জমির পরিমাণ ১৩৮ হেক্টর। গত বছর একই পরিমাণ ছিল। গত বছর হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৫.১১।
এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবা আক্তার বলেন, গতবারের চেয়ে এবার ভাল ফলন হয়েছে। কিন্তু তাপপ্রবাহের কারণে লিচু শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। লিচুতে পর্যাপ্ত রস ধরে রাখার জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, এবার তাপমাত্রা অনেক বেশি। চলমান তাপপ্রবাহে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। এবার পর্যাপ্ত লিচু হয়েছে। খুব বেশি ক্ষতি হবে না। কারণ ব্যাপকভাবে লিচুর পরিচর্যা করছেন মালিক ও বাগানিরা।
Leave a Reply