প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বাংলার মুখ আমি’ কবিতার সেই ভাঁটফুল এখন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক গ্রামের রাস্তার দুই ধারে সেইসাথে ছড়াচ্ছে সুবাস। তবে শুধু ঠাকুরগাঁওয়ে নয়,চৈত্র থেকে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত প্রায় সারা দেশেই ভাঁটফুলের সুবাস ও সৌন্দর্য আমাদের মাতিয়ে রাখে। এটি গ্রামবাংলার সকলের কাছে অতিপরিচিত একটি বুনো ফুল।
প্রকৃতিতে এখন বসন্তকাল। তবু গ্রামে শীতের আমেজ একেবারেই ফুরিয়ে যায়নি। প্রতিদিন সকালের সবুজ ঘাসের মাথার উপরে জমে থাকছে ফোটা ফোটা শিশিরবিন্দু। গাঁয়ের মেঠোপথের দুই ধারে থোকায় থোকায় ফুটতে শুরু করেছে ভাঁটফুল। অনেকটা নীরবেই বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে অপার সৌন্দর্য। স্নিগ্ধ শোভার সুরভিত ভাঁটফুলের রূপসুধায় আকৃষ্ট হয়ে আসছে অনেক পাখি ও পতঙ্গ। ভাঁটফুলের নয়নাভিরাম শুভ্রতায় পুলকিত হয়ে উঠছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মন।
এই ভাট ফুলটি এখন জেলার গ্রামের পথগুলোর দুই পাশে, ঝোপঝাড়ে ও পতিত জমিতে চমৎকারভাবে ফুটে আছে।
পাহাড়ভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বলেন, ‘সড়কের পাশে যখন ফুলগুলো দেখি, তখন মনে হয়, কেউ যেন আস্ত একটি ফুলের বাগান তৈরি করে রেখেছে। অবাক করা বিষয় হলো, ফুলটি চাষ না করেই আমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।’
ভাঁটফুল (Clerondendron viscosum) ছোট আকৃতির নরম শাখা-প্রশাখাবিশিষ্ট ঝোপজাতীয় গুল্মশ্রেণির বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ। ফুলটি বসন্তকালেই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ফুলটি নানা কারুকাজে ভরা। এ ফুলের পুংকেশর, পাপড়ি, পাতা ও কাণ্ডকে প্রকৃতি নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে। ফুলের পুংকেশরই এ ফুলের প্রধান সৌন্দর্য। সাদা রঙের এ ফুলে আছে পাঁচটি পাপড়ি। প্রতিটি ফুলের অভ্যন্তরে বেগুনি রঙের ঢেউ ফুলটিকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয় সুন্দর।
ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন,যাঁরা উদ্ভিদবিজ্ঞান কিংবা নার্সারি নিয়ে কাজ করেন এবং ফুল ও উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁরা আমাদের গ্রামীণ এ ফুলের সৌন্দর্য ও উপকারিতা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারেন।সেই সাথে এই ভাঁটফুলটির রয়েছে ঔষধি গুণাবলির অধিকার।
Leave a Reply