তথ্য নিয়ে জানা গেছে, হরিধানের চাল মোটা হলেও ভাত সুস্বাদু। এই ধানের গাছ পুষ্ট ও লম্বা হওয়ায় বিচালির দাম অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি। এছাড়া কম সারে অধিক ফলন। এতো গুন বা বৈশিষ্ট্য থাকার পরও ঝিনাইদহ জেলাতে হরি ধান চাষ সম্প্রসারন করা যায়নি। হরি ধানের উদ্ভাবক প্রয়াত কৃষক হরিপদ কাপালি জেলা পর্যায়ের নানা পুরস্কার পেলেও এখনো জাত হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পায়নি হরিধান।
অপরদিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা রতনপুর, মধুহাটি, মামুনশিয়া ও ধোপাবিলা গ্রামে কিছু কৃষক হরি ধান চাষ করছেন। তবে এই ধানের আবাদ সম্প্রসারিত না হওয়ার কারণে হরি ধান ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, বিদেশী বীজ কোম্পানীর বাজার নিয়ন্ত্রনের কারনে সিন্ডিকেটের সাথে পাল্লা দিয়ে বাজারে টিকতে পারেনি হরি ধান। যার ফলে আমাদের এলাকার উদ্ভাবিত হরি ধানের বীজ হারানোর পথে।
হরিপদ কাপালীর পালিত পুত্র রূপকুমার জানান, হরি ধানের জাতটি বীজকেন্দ্রীক বাজারজাতের কৌশলের কাছে টিকতে পারেনি। উচ্চফলনশীল জাতটি সুকৌশলে একটি মহল বাজার থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। প্রথম দিকে এ ধানে কোনো রোগবালাই ধরেনি। কিন্তু জমিতে একই ফসল বারবার চাষ করলে উৎপাদন কমে যায়। সে কারণেই হয়তো কৃষকরা হরি ধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে হরি হরিপদ কাপলীর উদ্ভাবনা নিয়ে জেলার সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজল জানান, এই খবরটি প্রথম পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দেশে হৈচৈ পড়ে যায়। এরপর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ^ মিডিয়া লুফে নেয় হরিপদ কাপালীর উদ্ভাবনার খবরটি।
তিনি আরো জানান, কৃষকের মাঝে হরি ধান চাষ প্রায় হারিয়ে গেছে। তার কারন হলো বর্তমান কৃষকদের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে বিদেশী হাইব্রিড জাতের ধান বীজের প্রতি। এ কারণে এখন আর কেউ হরি ধান চাষ করছেন না।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-এ-নবী জানান, আমি এখানে এসে নিজে কখনো হরি ধান দেখি নাই। তবে পত্র-পত্রিকা মারফত জেনেছি। বর্তমানে যদি এই ধান চাষে কৃষক লাভবান হয় এবং সরকারি ভাবে এটার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করা হয় তাহলে অবশ্যই আমরা এগিয়ে নিবো। এ বিষয়ে কৃষকরা শতভাগ সহয়তা পাবেন।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সুধাহাটি ইউনিয়নের আসাননগর গ্রামের জাত কৃষক প্রয়াত হরিপদ কাপালি দুই দশক আগে উদ্ভাবন করেন হরি ধান। এই ধান উদ্ভাবনের পর দেশব্যাপী খবরটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
Leave a Reply